ঢাকা, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫: গবেষণা সংস্থা ‘চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ’-এর “Bangladesh’s NDC-3.0: Pathways for Ambition, Action, and Finance” শীর্ষক গবেষণায় চিহ্নিত হয়েছে, বাংলাদেশ এনডিসি ২.০-এর আওতায় ২০৩০ সাল নাগাদ শর্তহীন (আনকন্ডিশনাল) কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার পূরণের পথে রয়েছে। তবে শর্তসাপেক্ষে (কন্ডিশনাল) প্রয়োজনীয় ২৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জলবায়ু তহবিলের মাত্র ১.২৫% অর্থায়ন পাওয়ায় ৮৯.৪৭ MtCO₂e নিঃসরণ কমানোর পূর্ণ সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত দেশগুলো সময়মতো অর্থায়ন নিশ্চিত করলে এনডিসি ৩.০-এর মাধ্যমে পাঁচগুণ বেশি নিঃসরণ কমানো সম্ভব। এটি কোনো দয়া নয়, বরং OECD দেশগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা ও জলবায়ু ন্যায়বিচারের পরীক্ষা। উল্লেখ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পরবর্তী জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা এনডিসি ৩.০ পূরণে মোট ৩১৬ বিলিয়ন ডলারের (আনকন্ডিশনাল ৪৬.৩৮ বিলিয়ন এবং কন্ডিশনাল ২৭০.১৩ বিলিয়ন ডলার) প্রয়োজন হবে, এই লক্ষ্য / উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন শিল্পোন্নত দেশগুলোর জলবায়ু অনুদানের ওপর নির্ভরশীল। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম. জাকির হোসেন খান; ফলাফল উপস্থাপন করেন সহ-গবেষক তন্ময় সাহা ও সাবরিন সুলতানা।
এনডিসি: যাত্রাপথ এবং মূল পরিসংখ্যান
প্যারিস চুক্তির অঙ্গীকার থেকে এনডিসি ৩.০
বাংলাদেশ ২০১৫ সালে অঙ্গীকার করে যে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৫% (আনকন্ডিশনাল) কমানো হবে। ২০২১ সালের এনডিসি ২.০-তে তা বাড়িয়ে আনকন্ডিশনাল ৬.৭৩% ও কন্ডিশনাল ২১.৮৫% নির্ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যেই আনকন্ডিশনাল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯% অর্জিত হয়েছে। তবে কন্ডিশনাল লক্ষ্যপূরণে বড় বাধা আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও প্রযুক্তির ঘাটতি।
এনডিসি ৩.০ তে প্রস্তাব
• আনকন্ডিশনাল নিঃসরণ কমানো: ৩৯.৫৮ MtCO₂e (BAU-এর ৯.১৫%)
• কন্ডিশনাল নিঃসরণ কমানো: ১১৬.৩৫ MtCO₂e (BAU-এর ২৬.৯%)
• ২০৩০ সাল নাগাদ মোট জলবায়ু অনুদান প্রয়োজন: ৩১৬ বিলিয়ন ডলার (আনকন্ডিশনাল ৪৬.৩৮ + কন্ডিশনাল ২৭০.১৩)
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ-এর প্রধান নির্বাহী এম. জাকির হোসেন খান বলেন, “এনডিসি বাস্তবায়নে শর্তসাপেক্ষ অর্থায়ন শুধু বাজেটের হিসাব নয়, এটি কার্বন ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ ও পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের কাছে উন্নত দেশগুলোর অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়নের অঙ্গীকার পূরণ করা তাদের ন্যূনতম দায়।”
এনডিসি ৩.০-তে খাতভিত্তিক রূপান্তরমূলক প্রশমন সম্ভাবনা
শক্তি ও বিদ্যুৎ খাত:
o কার্বন নিঃসরণ পূর্বাভাসে কেবল নবায়নযোগ্য সক্ষমতা (capacity) নয়, বিদ্যুৎ ব্যবহারও (GWh) বিবেচনা করা উচিত। বর্তমান প্রবণতা (BAU) অনুসারে, নিঃসরণ ৯৫.১৪ MtCO₂e থেকে বেড়ে ১০৮.৮৭ MtCO₂e হবে।
o কন্ডিশনাল লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ২৪,১০৬ মেগাওয়াট (MW) নবায়নযোগ্য শক্তির সক্ষমতা প্রয়োজন।
o কমানোর সম্ভাবনা: ১১.৩২ MtCO₂e (আনকন্ডিশনাল), ৫৮.২৭ MtCO₂e (কন্ডিশনাল)।
o জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত হলে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, গ্রিড দক্ষতা, গ্যাস অপ্টিমাইজেশন এবং কয়লা ব্যবহার কমিয়ে পাঁচগুণ নিঃসরণ কমানো সম্ভব।
শিল্প (IPPU): এনডিসি ২.০-তে লক্ষ্যহীন শিল্প খাতে স্টিল ফার্নেস উন্নয়ন ও সার-সিমেন্ট শিল্পে পদক্ষেপে প্রায় ৩.০৯ MtCO₂e প্রশমন সম্ভব।
কৃষি, বন ও ভূমি (AFOLU): সমন্বিত কার্বন হিসাব নেই। কৃষি-বনায়ন ও ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধার জরুরি; যেখানে ব্লু কার্বন ক্রেডিটে প্রতি টন ৭৫–৯০ ডলার রাজস্ব অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।
নগর ব্যবস্থা: ঢাকায় এসি তাপমাত্রা ২২°C থেকে ২৬°C করলে বিদ্যুৎ চাহিদা কমবে ৪,৩০২ মেগাওয়াট। সবুজ এলাকা বাড়ালে শীতলীকরণ চাহিদা কমবে ৫–১৫%।
পরিবহন: দেশের ৮.৮৬% জ্বালানি নিঃসরণ আসে পরিবহন থেকে। সমাধান: ইভি ব্যবহার, চার্জিং অবকাঠামো, প্রণোদনা।
দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে—যেমন কম্পোস্টিং ও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, একদিকে দূষণ ও ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন কমাবে, অন্যদিকে মাটি পাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি। কিন্তু এই সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কার্যকর আইন প্রয়োগ এখনো দুর্বল। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং এনডিসি ৩.০ প্রণয়নের সাথে জড়িত প্রফেসর ইজাজ হোসেন বলেন, “ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর একটি হলেও এটি আর বাসযোগ্য নয়। এখনই সময় শহরের পরিবেশগত অবক্ষয় রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার-শুধু বৈশ্বিক লক্ষ্য যেমন এনডিসি অর্জনের জন্য নয়, বরং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভিত্তিতেই ন্যায্য রুপান্তর হতে হবে। এনডিসি ৩.০ তে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নজর দেয়া হচ্ছে। এনডিসি বাস্তবায়নে নাগরিকসহ সকল অংশীজনের সাথে ব্যাপক ভিত্তিতে সংলাপ করতে হবে।‘’
চ্যালেঞ্জ এবং সুপারিশ
সার্বিকভাবে, বার্ষিক ২.৮৬ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি, সীমিত তহবিল এবং প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের অভাব এনডিসি-এর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। দুর্বল সমন্বয় এবং বিশেষ করে পরিবহন, বর্জ্য ও নগর ব্যবস্থায় কাঠামোগত সমন্বয়ের অভাব এনডিসি-এর অগ্রগতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এটি বৈশ্বিক জলবায়ু ন্যায়বিচারের বিশ্বাসযোগ্যতার বৈষম্য উন্মোচন করে। উপরন্তু, অপর্যাপ্ত ও অনির্ভরযোগ্য ভিত্তি তথ্য (baseline data), অপর্যাপ্ত এমআরভি (MRV) ব্যবস্থা এবং কার্যকরভাবে জলবায়ু অর্থায়ন পরিচালনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতি এই চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও জটিল করে তোলে। বিক্ষিপ্ত এমআরভি ব্যবস্থা কার্বন নিঃসরণ পর্যবেক্ষণকে জটিল করে তুলছে। ফলে, উচ্চ সম্ভাবনাময় পরিবহন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো প্রধান নিঃসরণকারী খাতগুলো প্রায় উপেক্ষিত রয়ে গেছে।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ-এর প্রধান নির্বাহী এম. জাকির হোসেন খান বলেন, “আগামী ৩০তম জলবায়ু সম্মেলন (CoP30) প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর নেতাদের জন্য শেষ সতর্কবার্তা: প্রকৃতি ও জলবায়ু বিনাশী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে প্রাকৃতিক অধিকার-ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা (Natural Rights Led Governance) গ্রহণ করে পৃথিবী ও ও প্রাণকে সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট অংগীকার প্রদান করে নিজেদের সততা প্রমাণ করুন। এর চেয়ে কম কিছু করা জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং বৈশ্বিক বিশ্বাসযোগ্যতা উভয়েরই সাথে বিশ্বাসঘাতকতা বলে প্রতীয়মান হবে। দেশে দেশে বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক দুর্দশার শিকার তরুণরা নিজেদের ভবিষ্যত বিনির্মাণে আরো অগ্রসর হবে।”
সুপারিশসমূহ
• আন্তর্জাতিক অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন: শর্তাধীন (কন্ডিশনাল) কার্যক্রম বাস্তবায়নে জল্বায়ু অনুদানভিত্তিক অর্থায়নকে জলবায়ু ন্যায়বিচার এর আলোকে বিবেচনা করা এবং সময়াবদ্ধ নির্ভরযোগ্য সহায়তা নিশ্চিত করা।
• তদারকি, রিপোর্টিং এবং যাচাই প্রক্রিয়া ও সমন্বয় শক্তিশালীকরণ: ডেটা সংগ্রহ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় উন্নত করতে ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহার করা।
• রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন সম্ভাবনা: কার্বন ও দূষণ কর (carbon and pollution taxes) প্রয়োগ এবং আন্তর্জাতিক কার্বন বাজারে (carbon markets) অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।
• নগর পরিকল্পনা ও নাগরিক আচরণকে জলবায়ু নীতির মূলধারায় আনা: জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি, গণপরিবহন ব্যবহারের প্রসার, বর্জ্য হ্রাস ও পুনর্ব্যবহারকে এনডিসি লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্ত করা।
• উচ্চ সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে অগ্রাধিকার: ব্লু কার্বন, কৃষি-বনায়ন (Agroforestry) এবং টেকসই ভূমি ব্যবহারকে উৎসাহিত করা, যাতে বেশি পরিমাণে কার্বন শোষণ করা যায় এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো যায়।
প্যারিস চুক্তির ১.৫° সে. লক্ষ্য অর্জনের জন্য এনডিসি ৩.০-কে পূর্ববর্তী পরিকল্পনাগুলোর তুলনায় আরও উচ্চাভিলাষী হতে হবে, আর এনডিসি ৩.০ কে বাস্তবায়নযোগ্য করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের তাদের জলবায়ু অর্থায়নের অঙ্গীকার পূরণ করা অপরিহার্য।

বাংলাদেশে কৃষির বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা -ড. মো. আনোয়ার হোসেন.
বিএলআরআই আঞ্চলিক কেন্দ্র, সৈয়দপুর, নীলফামারী এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা
মূল্য সংযোজন ও পুষ্টি উন্নয়নে সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণের অপার সম্ভাবনা
বিসিএস কৃষি ক্যাডার এসোসিয়েশনের কমিটি ঘোষণা
বাংলাদেশের Floriade Expo 2022 জয়