বাংলাদেশ সরকার ভিশন ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রবর্তন করেছে, যার লক্ষ্য ছিল চরম দারিদ্র দূর করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ অর্থনৈতিক রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জন করা। খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য টেকসই কৃষিতে একটি দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন ইতিমধ্যেই হয়েছে। কৃষি উৎপাদনের বাণিজ্যিকীকরণ বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আর তাই নিরাপদ খাদ্য, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, সম্পদ সংরক্ষণ, মাটির স্বাস্থ্য স্থায়িত্ব এবং জৈব প্রযুক্তিগত উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। উপরন্ত, শিল্পপতি এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পন্যের আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী গুনগত মান নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আর্কষণীয় এবং টেকসই প্যাকেজিং দিয়ে প্রক্রিয়াজাত মূল্য সংযোজনমূলক কৃষি উৎপাদন, পরিবহন, বিপনন ও বিশ্ব রপ্তানি বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধিতে যথাযথ ভূমিকা পালনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে তাজা ফল ও সবজির রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সহায়ক বাণিজ্যনীতির মাধ্যমে এই ধারা বজায় রাখতে হবে। লাউ, সীম, লেবু, আম ও কাঁঠালের মতো কৃষিজাত পণ্যগুলিকে রপ্তানির জন্য মূল্য সংযোজিত খাদ্য আইটেমে রূপান্তরের জন্য যথাযথভাবে প্রক্রিয়াজাত করা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা বাড়াতে স্বীকৃত ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে পণ্যের গুনগত মান নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র এবং WTO_SPS agreement স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে কৃষিপণ্য আমদানী রপ্তানি কল্পে “International Standards for Phytosanitary measures” (ISPMs) অনুসরণ করতে হবে। “ISPMs 27” Phytosanitary measures গুলোর যথাযথ প্রয়োগের জন্য বালাই পরীক্ষণ ও সনাক্তকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং স্বীকৃত বালাই সনাক্তকরণ প্রটোকল আঞ্চলিকভাবে বাণিজ্যিক প্রসারে ভূমিকা রাখবে।
স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠনে নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন কৃষিজাত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। কৃষিজাত পণ্যে বর্ধিত চাহিদার যোগান নিশ্চিত করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার কারণে দেশে কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন ব্যপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন কৃষিজাত খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিজাত খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় ‘মানসম্পন্ন কৃষিজাত খাদ্য’ এর বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। ‘মানসম্পন্ন কৃষিজাত খাদ্য’ উৎপাদনের জন্য ‘মানসম্পন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদন উপকরণ’ এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কৃষি পণ্য উৎপাদন উপকরণ এবং কৃষিজাত খাদ্যের গুণনগতমান নিশ্চিতের লক্ষ্যে গবেষনাগারে পরীক্ষার কোন বিকল্প নেই। এ বিষয়টি উপলব্ধি করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে জুলাই-২০২১ হতে জুন-২০২৫ মেয়াদে প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা ব্যায়ে ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই গবেষণাগারের প্রতিটি শাখা প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত সংখ্যক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং বায়োসেফটি ইকুইপমেন্ট দ্বারা সজ্জিত করা হবে। গবেষণাগারটি ISO/IEC 17025:2017 মানদন্ড অনুযায়ী পরিচালিত হবে। গবেষণাগারে নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য এবং বিশ্বাসযোগ্য ও রিপ্রডিউসিবল টেস্ট রেজাল্ট প্রাপ্তির জন্য আপডেটেড এবং ভেরিফাইড বা ভেলিডেটেড পদ্ধতি Standard Operating Procedure (SOP) ব্যবহার করা হব। বালাই সনাক্তকরণ এর জন্য এই সব প্রটোকলগুলো পরীক্ষাগার Accreditation এর সাথে প্রাসঙ্গিক যা আন্তর্জাতিকভাবে দক্ষতা উন্নয়ন এবং কারিগরি সহায়তা বিকাশে সাহায্য করবে।

প্রকল্পের প্রত্যাশিত ফলাফল:
• ল্যাবরেটরি গুলি কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ISO 9001:2015 সার্টিফিকেশন এবং ISO 17025:2017 অ্যাক্রিডিটেশন স্বীকৃতির জন্য যোগ্য হবে।
• প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিদেশের বাজারে প্রবেশাধিকার তৈরি করবে, দেশের সবজি ও ফলের নিরাপদ রপ্তানি সক্ষম করবে, WTO_SPS চুক্তি এবং International Plant Protection Convention (IPPC) এর বিধানগুলি মেনে চলবে এবং রপ্তানি আয় বাড়বে।
• বিদেশী ক্ষতিকারক রোগ এবং কীটপতঙ্গ যাতে দেশে প্রবেশ না করতে পারে তা নিশ্চিতকরণ এবং আমদানিকৃত কৃষি পণ্য ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে।
• আলুসহ বিভিন্ন শাক-সবজি ও ফলের রপ্তানি এশিয়া, ইউরোপসহ অন্যান্য দেশেও বাড়বে।
• উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিষয়ে বাকি বিশ্বের সাথে থাকা সম্ভব হবে, যার ফলে রপ্তানিকৃত পণ্যের ফাইটোস্যানেটারি ইন্টারসেপশন কমে আসবে।
• কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজের আধুনিকায়নের ফলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করে রপ্তানি কার্যক্রম করা হবে।
প্রকল্প আউটপুট:
বাংলাদেশের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজ, শ্যামপুর, ঢাকায় উদ্ভিদ সংগনিরোধ কার্যক্রমে রোগ ও কীটপতঙ্গ সনাক্তকরণের জন্য একটি আন্তর্জাতিকমানের স্বীকৃত পরীক্ষাগার স্থাপনের জন্য বিদ্যমান ভৌত অবকাঠামো পরিবর্তন করা হবে যা কৃষকদের রপ্তানি ত্বরান্বিত করে তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পেতে সহায়তা করবে।
• WTO_SPS চুক্তি এবং International Plant Protection Convention (IPPC) এর নিয়ম অনুসরণ করে নিরাপদ কৃষি পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করা সম্ভব।
• প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টাইন ল্যাবরেটরি পরীক্ষার বিষয়ে সরাসরি যুক্ত কর্মকর্তাদের দেশে/বিদেশে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে।
• ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মান উন্নত করে আমদানিকারকদের আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং বছরে কমপক্ষে ২৫%-৩০% কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়বে।
• বিভিন্ন উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রে পরীক্ষাগার স্থাপন করে রোগ ও কীটপতঙ্গ পরীক্ষার সুযোগ তৈরি করবে এবং দেশের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে ল্যাবরেটরির কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।
• কীটপতঙ্গের উপদ্রব রোধ করে উৎপাদনের ধারাবহিকতা বজায় রাখতে হবে যাতে ন্যূনতম ২% হারে আমদানি কমানো সম্ভব হয়।
• বিদেশে বাংলাদেশী পণ্যের বাজারে প্রবেশাধিকার পাওয়া যাবে।
• জাতীয় সেমিনার/ওয়ার্কশপ এর মাধ্যমে উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা হবে, যা কৃষিকে রক্ষা করবে এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিকে সহজতর করবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে কৃষি ও খাদ্য পণ্যের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য এবং সম্ভাব্য রাসায়ানিক দূষণ বিশ্লেষণ করার ন্যূনতম ক্ষমতা রয়েছে। উদ্ভিদ সুরক্ষা শাখার পরীক্ষাগারে সীমিত পরিসরে কয়েকটি রাসায়নিক পরীক্ষা করা যায়। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে জনস্বাস্থ্য এবং উদ্ভিদস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য একটি আধুনিক মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার অবকাঠামোর প্রয়োজন। তাই শাকসবজি, ফলমূল এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি এবং আমদানিকারক দেশের চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যারেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর প্রকল্পটি গ্রহন করা হয়েছে।
*ড. শামীম আহমেদ, প্রকল্প পরিচালক **অনন্ত সরকার, উপ-প্রকল্প পরিচালক -কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর প্রকল্প

খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশে কৃষিই ভরসা -রাশমিয়া শামীম নিমিতা
বাংলাদেশে কৃষির বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা -ড. মো. আনোয়ার হোসেন.
Ensuring Fair Returns for Bangladeshi Potato Farmers in 2025: Challenges and Way forward – Dr. Md. Mahfuz Alam
Empowering Voices, Challenging Narratives -Dr. M Abdul Momin
আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ : নিরাপদ উচ্চমূল্য ফসল উৎপাদন
ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি : নারী ও শিক্ষিত তরুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি